রেনে দেকার্ত
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রেনে দেকার্ত একজন ফরাশি দার্শনিক, গণিতজ্ঞ, এবং বিজ্ঞানী।
তিনি পাশ্চাত্যের প্রথম আধুনিক দার্শনিক হিসেবে স্বীকৃত। তিনি একজন দ্বৈতবাদী (dualist) দার্শনিক ছিলেন। তাছাড়া তিনি জ্যামিতি (Geometry) ও বীজগনিতের (Algebra) মধ্যে কার সম্পর্ক নিরুপন করেণ, যার দ্বারা বীজগনিতের সাহায্যে জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়। তিনি বস্তু (Matter) সম্পর্কে এক নতুন ধারণা দেন।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] জন্ম ও শৈশব
দেকার্ত ১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ শে মার্চ লাহ্যেতে জন্ম গ্রহন করেণ। তার পিতা জোয়াসিম দেকার্ত এবং মাতা জেনি ব্রোচার্ড। তার আরো এক ভাই (পায়েরি) ও এক বোন (জেনি) ছিল। দেকার্তের পিতা একধারে একজন উকিল ও ম্যাজিস্ট্রট ছিলেন, ফলে সংসারে তিনি বেশি সময় দিতে পারতেন না। জেনি ব্রোচার্ড দেকার্তের জন্মের দুই মাস পর মে মাসে মারা যান; তখন দেকার্তএবং তার অন্য দুই ভাই ও বোন লাহ্যেতে তাদের দাদির কাছে চলে যান। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় বাস করেছেন।
[সম্পাদনা করুন] শিক্ষা
প্রায় দশ বছর বয়সে ১৬০৬ সালে দেকার্তকে জেস্যুট কলেজে পাঠানো হয়। তিনি সেখানে ১৬১৪ সাল পর্যন্ত পড়েন এবং ১৬১৫ সালে পোয়েটিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একবছর পর তিনি ব্যাকলরিয়েট (Baccalaureate) ডিগ্রি ধর্মিয় অনুশাসন ও দেওয়ানি আইন (canon and civil law)এর লাইসেন্স লাভ করেণ।
[সম্পাদনা করুন] কর্মজীবন
তরুণ বয়সেই মানুষ এবং মহাবিশ্বের স্বরুপ জানার জন্য একটি অন্তর্দৃষ্টি পাবার প্রবল ইচ্ছা জাগে তার মনে। গভীর অধ্যয়নের পরে দেকার্ত এই সিদ্ধান্তে আসেন যে মধ্যযুগ থেকে যে জ্ঞান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এসেছে তা খুব নির্ভরযোগ্য নয়। তিনি ঠিক করলেন সারা ইউরোপ ঘুরে বেড়াবেন, ঠিক যেমন সক্রেটিস এথেন্সের লোকের সাথে কথা বলে জীবন কাটিয়েছেন। এ কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধে চলে গেলেন তিনি, তার ফলে মধ্য ইউরোপে কিছু দিন থাকার সুযোগ হল তার। সেনাবাহিনীতে তিনি কি করতেন তা সঠিক ভাবে জানা যায় না, ১৬১৯ সালে তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেণ। এরপর প্যারিসে কাটান কিছু বছর, তারপর ১৬২৯ সালে চলে যান হল্যান্ড, সেখানে গনিত আর দর্শন বিষয়ক লেখালেখি নিয়ে কাটিয়ে দেন প্রায় বিশ বছর। ১৬৪৯ সালে রানী ক্রিস্টিনার আমন্ত্রনে সুইডেন যান এবং সেখানে নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের শীতকালে মৃত্যুবরণ করেণ।
[সম্পাদনা করুন] দর্শন
দেকার্ত দার্শনিক সমস্যা সমাধানের একটি পদ্ধতির প্রস্তাব করেন। দেকার্তের মত অনুযায়ী, কোনো কিছুকে পরিস্কার এবং ইন্দ্রিয় দিয়ে প্রত্যক্ষ না করা আমরা সেটাকে সত্য বলে ধরে নিতে পারি না। সেজন্য, কোনো জটিল সমস্যাকে যতগুলো সম্ভব একক সমস্যায় ভেঙ্গে নেয়া বা ছোট করে নেয়া দরকার। তখন সেগুলোর মধ্যেসবচেয়ে সহজ ভাব থেকে আমরা চিন্তা শুরু করতে পারি। দেকার্ত বিশ্বাস করতেন দর্শনের অগ্রসর হওয়া উচিত সরল থেকে জটিলের দিকে।
দেকার্ত বললেন যে দুই ধরণের বাস্তবতা বা সারবস্তু রয়েছে। একটি সারবস্তু হচ্ছে চিন্তা (thought ) বা মন অন্যটি ব্যাপ্তি বা বস্তু (matter)। মন পুরোপুরি সচেতন এবং স্থানগত দিক দিয়ে কোনো জায়গা দখল করে না, ফলে এটাকে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত করা যায় না। অন্যদিকে বস্তু জায়গা দখল করে এবং একে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশে ভাগ করা চলে। বস্তুর কোনো চেতনা নেই। দেকার্তের মতে দুই সারবস্তুই ইশ্বর থেকে এসেছে, যদিও এ দুই সারবস্তুর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এজন্য দেকার্তকে দ্বৈতবাদী (dualist) বলা হয়।