রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Latin: Rajshahi University |
|
স্থাপিত | ১৯৫৩ |
---|---|
ধরণ | পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় |
আচার্য | অধ্যাপক ডঃ ইয়াজুদ্দিন আহমেদ |
উপাচার্য | অধ্যাপক ডঃ এম. আলতাফ হোসেন |
ডীন | ৭ |
শিক্ষক | ১০০০ |
কর্মচারী | ২০০০ |
ছাত্র | ২৫,০০০ |
অবস্থান | রাজশাহী, বাংলাদেশ |
ঠিকানা | মতিহার, রাজশাহী - ৬২০৫ |
দূরালাপনী | +৮৮০-৭২১- ৭৫০০৪১-৫৪ |
ক্যাম্পাস | শহরে প্রায় ৭৫৩ একর |
ডাকনাম | রাবি (RU) |
ওয়েবসাইট | http://www.ru.ac.bd |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে রাজশাহী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দুরে পদ্মা নদীর তীর ঘেষে রয়েছে একটি সবুজ ছায়াঘেরা ক্যাম্পাস৷ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে ১৯৫৩ সালের জুলাই ৬৷ সেদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিলো মাত্র ১৬১জন৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন ইতরাত হোসেন জুবেরী৷
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] প্রতিষ্ঠার কথা
রাজশাহী ছিলো প্রাচীন বরেন্দ্রভূমির প্রাণকেন্দ্র৷ ইতিহাসের অনেক রাজশক্তির উত্থান পতনের স্বাক্ষী এই বরেন্দ্র ভূমি৷ এখন থেকে কয়েক হাজার বছর আগে পাল আমলে এই বরেন্দ্র অঞ্চলেরই নওগা জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্মশাস্ত্র চর্চার প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে স্বীকৃত ছিলো এই বৌদ্ধবিহার৷ সে সময়ে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছিল৷ বিশ্বের নানা দেশ থেকে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার জন্য এখানে আসত শিক্ষর্থীরা৷ কালের গহ্বরে আস্তে আস্তে নিজের গৌরব হারাতে থাকে বরেন্দ্রভূমি৷ পিছিয়ে পড়তে থাকে ক্রমশ৷ এক সময়ের সমৃদ্ধশালী বরেন্দ্র ভূমি পরিনত হয় শিক্ষাদীক্ষা অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে৷
ব্রিটিশ যুগে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষাদীক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয রাজশাহী কলেজ৷ রাজশাহী কলেজের অবস্থানও ছিলো বেশ ওপরে৷ কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের পরই রাজশাহী কলেজের স্থান ধরা হতো৷সে সময়ে রাজশাহী কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েট শ্রেনী চালু করা হয়৷ কিন্ত এর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এসব কার্যক্রম৷ সে সময়েই রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়৷
ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন বেশ জোরে শোরেই শুরু হয়৷ ১৯৫০ সালের নভেম্বর ১৫ রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের নিয়ে ৬৪সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি ১০ রাজশাহী শহরের ভূবন মোহন পার্কে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সর্বপ্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রথম দাবি অবশ্য ওঠে রাজশাহী কলেজেই৷ ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলে৷ এই দাবি পাঠিয়ে দেয়া হয় তত্কালীন এমএলএ ও মন্ত্রীদের কাছে৷
পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি ১৩ ভূবন মোহন পার্কেই অনুষ্ঠিত হয় আরও একটি জনসভা৷ ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ এমএলএ৷ সভায় বক্তব্য রাখেন ইদ্রিস আহমেদ এমএলএ, প্রভাষ চন্দ্র লাহিড়ী, খোরশেদ আলম, আনসার আলী, আব্দুল জব্বার প্রমূখ৷ ক্রমেই তীব্র হতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি৷ এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা৷ পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়৷ ওই ডেলিগেশনের সদস্যদের মধ্যে মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য৷ এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়৷ এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ৷
১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ ভূবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদারবখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব৷ মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে৷ টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের মার্চ ৩১ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন মাদারবখশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে৷ এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়৷ এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তত্কালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এ খুরশীদ৷
আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সাল থেকে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে৷ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মার তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপর তলায়৷ বড়কুঠির কাছেই তত্কালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিত্সাকেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীহ্মা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে৷ বড়কুঠিপাড়ার মাতৃধাম এ স্থাপন করা হয় কলেজ পরিদর্শক দফতর৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন ওসমান গনি ও প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত হন অধ্য আব্দুল করিম৷ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে গড়ে ওঠে ছাত্রাবাস৷ রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাস হিসেবে৷ বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়৷
১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে৷ এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়৷ দক্ষিণ দিক দিয়ে ছুটে চলেছে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক, উত্তরের রেললাইনের মাঝে ছায়া ঢাকা সবুজ শ্যামলে ঘেরা এই ক্যাম্পাস৷
[সম্পাদনা করুন] বর্তমান অবস্থা
এখন প্রায় ৩০৪ হেক্টর জুড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫টি উচ্চতর গবেষনা ইন্সটিটিউট, ৮টি অনুষদের অধীনে ৪৬টি বিভাগে বতৃমানে পরিচালিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম৷ ক্যাম্পাসের উত্তর পুর্ব দিক জুড়ে রয়েছে ১১টি ছাত্রহল৷ ৪টি ছাত্রীহল ক্যাম্পাসের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত৷ এর পাশেই নির্মিনাধীন রয়েছে আরও একটি ছাত্রী হল৷ পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত জুড়ে রয়েছে শিকদের জন্য আবাসিক এলাকা৷ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লাইব্রেরীটি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এছাড়া রয়েছে, মেডিকেল সেন্টার, কম্পিউটার সেন্টার, শহীদ মিনার, স্টেডিয়াম৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা এদেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর৷ রয়েছে সাবাস বাংলাদেশ নামে একটি অপুর্ব শৈলির ভাষ্কর্য৷ আর রয়েছে গোল্ডেন জুবিলী টাওয়ার৷ প্রতিদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব স্থানে ঘুরতে আসেন সারা দেশ থেকে প্রচুর দর্শনার্থী৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি হিসেবে কর্মরত আছেন প্রফেসর আলতাফ হোসেন৷ উপ-উপাচার্য প্রফেসর মামনুনুল কেরামত৷
[সম্পাদনা করুন] অনুষদসমূহ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট আটটি অনুষদ রয়েছে। এগুলো হল ১. কলা অনুষদ, ২. বানিজ্য অনুষদ, ৩. বিজ্ঞান অনুষদ, ৪. কৃষি অনুষদ, ৫. সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ৬. আইন অনুষদ, ৭. জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ, ও ৮. চিকিত্সা অনুষদ ।
[সম্পাদনা করুন] গুণীজন
দীর্ঘ ৫৩ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জড়িত হয়েছে বেশ কয়েকজন প্রতিথযশা ব্যাক্তিত্বের স্মৃতিতে৷ এখানে শিক্ষকতা করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যক ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান, খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ডেভিড কফ, নৃবিজ্ঞানী পিটার বাউচি, কারেন্স ম্যালেনি , জোহানা কর্ক প্যাট্রিক, বিশিষ্ট ঐতিহাসিক প্রফেসর আব্দুল করিম, রমিলা থামার, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যক হাসান আজিজুল হক প্রমূখ ।