কাজী মোতাহার হোসেন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কাজী মোতাহার হোসেন (জুলাই ৩০, ১৮৮৭ - অক্টোবর ৯, ১৯৮১) একজন বাংলাদেশী পরিসংখ্যানবিদ, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] জন্ম ও শৈশব
কাজী মোতাহার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাগমারা গ্রামে। তবে তার জন্ম কুষ্টিয়া (তখনকার নদীয়া) জেলায় ১৮৮৭ সালের ৩০ জুলাই। সেখানেই তার পড়াশোনা। মেধাবী ছাত্র হিসাবে বৃত্তি নিয়ে ১৯০৭ সালে নিস্ন প্রাইমারি ও ১৯০৯ সালে উচ্চ প্রাইমারি পাশ করেন।
[সম্পাদনা করুন] শিক্ষাজীবন
কাজী মোতাহার হোসেন ১৯১৫ সালে কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পরীক্ষা ও ১৯১৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৯ ও ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে যথাক্রমে বি.এ (অনার্স) ও পদার্থবিজ্ঞানে এম.এ পাশ করেন। ১৯৩৮ সালে ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট Indian Statistical Institute (ISI) থেকে পরিসংখ্যান বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। যুগপৎ ভাবে, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৫১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে পি.এইচ.ডি করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল 'Design of Experiments'। তার ডক্টরাল থিসিসে তিনি 'Husain's Chain Rule' নামক একটি নতুন তত্ত্বের অবতারণা করেন। বস্তুত, তৎকালীন পূর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই প্রথম স্বীকৃত পরিসংখ্যানবিদ।
[সম্পাদনা করুন] কর্মজীবন
১৯২১ সালে ছাত্র থাকা কালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ডেমনেস্ট্রেটর হিসেবে চাকুরী শুরু করেন এবং একই বিভাগে ১৯২৩ সালে একজন সহকারী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। কাজী মোতাহার হোসেনের নিজ উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে এম.এ কোর্স চালু হয় এবং তিনি এই নতুন বিভাগে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে তিনি পরিসংখ্যানে একজন রিডার ও ১৯৫৪ সালে অধ্যাপক হন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে স্থাপিত পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তিনি প্রথম পরিচালক। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অনারারী (Professor Emeritus) অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে "জাতীয় অধ্যাপক" হিসেবে সম্মানিত করে।
[সম্পাদনা করুন] সাহিত্য
১৯২৬ সালে কাজী আব্দুল ওদুদ, সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল ফজলের সাথে তিনি "মুসলিম সাহিত্য সমাজ" গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি কিছুকাল 'শিখা' নামক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি বাংলা একাডেমির একজন প্রতিষ্ঠাতা। কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর অনেক বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখা বই গুলোর মধ্যে নজরুল কাব্য পরিচিতি(১৯৫৫), সেই পথ লক্ষ্য করে(১৯৫৮), সিম্পোজিয়াম(১৯৬৫), গনিত শাস্ত্রের ইতিহাস(১৯৭০), আলোক বিজ্ঞান(১৯৭৪) অন্যতম।
[সম্পাদনা করুন] পুরষ্কার
১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনকে "সিতারা-ই-ইমতিয়াজ" উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৬৯ সালে বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। বিজ্ঞান ও কলা বিষয়ে অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.এস.সি ডিগ্রি দ্বারা সম্মানিত করে।
[সম্পাদনা করুন] মৃত্যু
৯ অক্টোবর ১৯৮১ সালে তিনি ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন।