তাজউদ্দীন আহমদ
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাজউদ্দীন আহমদ (জুলাই ২৩, ১৯২৫ - নভেম্বর ৩, ১৯৭৫ ) বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন। একজন সৎ ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] জন্ম
তাজউদ্দীন আহমদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুননেসা খান।
[সম্পাদনা করুন] শিক্ষাজীবন
তিনি ম্যাট্রিক (১৯৪২) ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধাতালিকায় যথাক্রমে দ্বাদশ ও চতুর্থ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ.(সম্মান) ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কারাগারে থাকা অবস্থায় এল.এল.বি. ডিগ্রীর জন্য পরীক্ষা দেন এবং পাস করেন।
[সম্পাদনা করুন] রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা করুন] রাজনৈতিক জীবনের সূচনা
আবুল হাশিম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ১৯৪৩ সালে তাজউদ্দীন আহমদ মুসলিম লীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হন। ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।
[সম্পাদনা করুন] পাকিস্তান আমল
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। ছিলেন সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত ঢাকা জেলা আওয়ামী মুসলিম লীগের (১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় আওয়ামী লীগ) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪-এর নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদককে পরাজিত করে পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে যে সর্বদলীয় নেতৃসম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা দাবি উত্থাপন করেন, সেই সম্মেলনে শেখ মুজিবের সাথে তিনিও যোগদান করেন। সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে তাজউদ্দীন ছিলেন অন্যতম সদস্য। এই বছরের ৮ মে তিনি দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার হন। ১৯৬৮ সালে জেলে থাকা অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পুনঃনির্বাচিত হন। ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থানের ফলশ্রুতিতে জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এই বছরের সাধারণ নির্বাচনের জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ডের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
[সম্পাদনা করুন] মুক্তিযুদ্ধ
নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভের পরও ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় শেখ মুজিবের ডাকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তাজউদ্দীন আহমদ আত্মগোপন করেন এবং যুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য সীমান্তের দিকে যাত্রা করেন। ৩০শে মার্চ মেহেরপুরে ভারতীয় সীমান্তের কাছে পৌঁছেন, ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ৪ঠা এপ্রিল দিল্লীতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। ১০ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ ঘোষনা করা হয়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অস্থায়ী সরকার ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত কলকাতা থেকে কার্য পরিচালনা করে। তাজউদ্দীন আহমদ দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সাথে এতে নেতৃত্ব দেন।
[সম্পাদনা করুন] স্বাধীন বাংলাদেশ
২২শে ডিসেম্বর তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বাংলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দ ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসলে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় বাজেট পেশ করেন, প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাজউদ্দীনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ ৩০ বছরের বিশ্বস্ত রাজনৈতিক সহকর্মীকে ভুল বুঝেন। ১৯৭৪ সালের ২৬শে অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাজউদ্দীন মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
[সম্পাদনা করুন] মৃত্যু
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর হত্যাকারীদের নির্দেশে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দী করা হয়। ২৩ আগস্ট সামরিক আইনের অধীনে তাজউদ্দীন আহমদ সহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ৩রা নভেম্বরে কারাগারের ভিতরে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোঃ মনসুর আলী এবং এ.এইচ.এম.কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে জেলহত্যা নামে কুখ্যাত হয়ে আছে।
পূর্বসূরী: নেই |
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এপ্রিল ১১, ১৯৭১ - জানুয়ারি ১৩, ১৯৭২ |
উত্তরসূরী: শেখ মুজিবুর রহমান |
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী | |
---|---|
তাজউদ্দীন আহমদ •শেখ মুজিবুর রহমান • মোঃ মনসুর আলী • মশিউর রহমান • শাহ আজিজুর রহমান • আতাউর রহমান খান • মিজানুর রহমান চৌধুরী • মওদুদ আহমেদ • কাজী জাফর আহমেদ •খালেদা জিয়া •শেখ হাসিনা ওয়াজেদ • খালেদা জিয়া • |
[সম্পাদনা করুন] সূত্র
- মূলধারা '৭১ - মুঈদুল হাসান
- আমার ছোটবেলা ১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমদ - সিমিন হোসেন রিমি
- বাংলাদেশের তারিখ - মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান