রঞ্জন রশ্মি
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রঞ্জন রশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বিশিষ্ট এক ধরনের তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ। এর অপর নাম এক্স-রে (X-ray)। রঞ্জনরশ্মির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য (সাধারণত ১০-০.০১ ন্যানোমিটার) সাধারণ আলোর চেয়ে অনেক কম বলে এদের খালি চোখে দেখা যায় না। ১৮৯৫ সালে উইলিয়াম রন্টজেন এই রশ্মি আবিস্কার করেন। তরঙ্গদৈর্ঘ্য যত ছোট হয় পদার্থ ভেদ করার ক্ষমতা তত বেশী হয়। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে রঞ্জনরশ্মি।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] বৈশিষ্ট্য
এক্সরে আর সাধারন আলোর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এদের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে। সাধারন আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 7x10^-7m থেকে 4x10^-7m এর কাছাকাছি। এক্সরের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 10^-8m থেকে 10^-13m এর কাছাকাছি। সাধারন আলো দৃশ্যমান এবং বিভিন্ন রঙে বিভক্ত হয়। কিন্তু এক্সরে দৃশ্যমান নয়। এক্সরে উচ্চ ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন। এক্সরে আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরন গ্যাসের মধ্য দিয়ে যাবার সময় গ্যাস্কে আয়নিত করে, কিন্তু সাধারন আলো তা করে না।
[সম্পাদনা করুন] প্রকারভেদ
(১) কোমল এক্সরে(Soft X-ray): এক্সরে যন্ত্রে কম বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে এক্সরে পাওয়া যায় অর্থ্যা যে এক্সরের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বেশী, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম, তাকে কোমল এক্সরে(Soft X-ray) বলে। (২) কঠিন এক্সরে(Hard X-ray): এক্সরে যন্ত্রে বেশী বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে যে এক্সরে পাওয়া যায় অর্থ্যা যে এক্সরের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত কম, ফলে ভেদন ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত বেশী, তাকে কঠিন এক্সরে(Hard X-ray) বলে।
[সম্পাদনা করুন] একক
এক্সরের একক হল রন্টজেন। এক রন্টজেন বলতে সেই পরিমান বিকিরন বুঝায় যা স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় এক মিলিমিটার বায়ুতে এক স্থির বৈদ্যুতিক আধানের সমান আধান উৎপন্ন করতে পারে।
[সম্পাদনা করুন] আবিষ্কার
বিজ্ঞানী রন্টজেন তড়িৎক্ষরন নলে(discharge tube) 10^-3mm পারদ চাপে বায়ুর মধ্যে তড়িৎরক্ষনের পরীক্ষা করতে গিয়ে লক্ষ করেন যে, নল থেকে কিছু দূরে অবস্থিত বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড আবৃত পর্দায় প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হচ্ছে। পরে তিনি আবিষ্কার করেন যে, তড়িৎক্ষরন নল থেকে ক্যাথোড রশ্মি যখন নলের দেয়ালে পড়ে তখন এই রশ্মির উৎপত্তি হয়। তিনি এই রশ্মির নাম রাখেন এক্সরে রশ্মি বা এক্সরশ্মি।
[সম্পাদনা করুন] সংজ্ঞা
দ্রুত গতি সম্পন্ন ইলেক্ট্রন কোন ধাতুকে আঘাত করলে তা থেকে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এবং উচ্চ ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন এক প্রকৃতির বিকিরণ উৎপন্ন হয়। এই বিকিরন কে বলা হয় এক্সরে বা এক্সরশ্মি(X-Ray).
[সম্পাদনা করুন] উৎপাদন
চিত্রে একটি এক্সরে টিউবের প্রয়োজনীয় অংশ দেখানো হয়েছে।
ফিলামেন্ট F-এর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎপ্রবাহ ক্যাথোড C-কে উত্তপ্ত করলে। ইলেক্ট্রন তাপীয় নিঃসরণ প্রক্রিয়ায়|একটি এক্সরে টিউবের প্রয়োজনীয় অংশ]]ক্যাথোড থেকে মুক্ত হয়ে আসে। তারপর একটি অতি উচ্চ বিভব প্রভেদ V-এর দ্বারা ইলেন্ট্রন গুলো ত্বরিত হয় ও আ্যনোডরূপী লক্ষবস্তু T-তে আঘাত করে। ফলে এক্সরে উৎপন্ন হয়।
[সম্পাদনা করুন] ধর্ম
- এ রশ্মি সরল্রেখায় গমন করে।
- এটি অত্যাধিক ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন।
- এক্সরে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র দ্বারা এটি বিচ্যুত হয় না।
- এটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব ছোট।
- সাধারন আলোর ন্যায় এক্সরের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যতিচার, অপবর্তন ও পোলারায়ন হয়ে থাকে।
- ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর এর প্রতিক্রিয়া আছে।
- এ রশ্মির আলোক তড়িৎ ক্রিয়া আছে।
- জিঙ্ক সালফাইড, বেরিয়াম প্লাটিনোসায়ানাইড প্রভৃতি পদার্থে এ রশ্মি প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করে।
- এটা আয়ন সৃষ্টিকারী বিকিরন।
- এটি আধান নিরপেক্ষ।
[সম্পাদনা করুন] ব্যবহার
(১) চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহারঃ
- স্থানচ্যুত হাড়, হাড়ে দাগ বা ফাটল, ভেঙ্গে যাওয়া হাড়, শরীরের ভিতরের কোন বস্তুর বা ফুস্ফুসের কোন ক্ষত, দাঁতের ক্যারিস ইত্যাদির অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- সিটি স্ক্যান হল কম্পিউটারের সাহায্যে রঞ্জন রশ্মি দ্বারা গৃহিত চিত্র সমন্বয় করে ত্রিমাত্রিক বা প্রস্থছেদ চিত্র বানাবার ব্যাবস্থা।
- ক্যান্সারের চিকিৎসায় রঞ্জন রশ্মি বিকিরণ ব্যবহৃত হয়।
- পরিপাক(Digestive) নালী দিয়ে খাদ্যবস্তুর গমন পথ অনুসরণ, আলসার নির্ণয় ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা হয়।
(২) শিল্পে ব্যবহারঃ
- ধাতব ঢালাইয়ের দোষ ত্রুটিপূর্ণ ওয়েল্ডিং, ধাতব পাতের গর্ত ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- কেলাস গঠন পরীক্ষায় এক্সরে ব্যবহৃত হয় এবং মণিকারেরা এর সাহায্যে আসল ও নকল গহনা চিহ্নিত করতে পারেন।
- টফি লজেন্স, সিগারেট ইত্যাদির মান বজায় আছে কিনা বা টফি ও লজেন্সে ক্ষতিকর কোন কিছু মিশ্রিত হয়েছে কিনা তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়।
(৩) গোয়েন্দা বিভাগে ব্যবহারঃ
- কাঠের বাক্স বা চামড়ার থলিতে বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখলে তা খুঁজে বের করতে ব্যবহার করা হয়।
- কাস্টম কর্মকর্তারা চোরাচলানের দ্রব্যাদি খুঁজে বের করতে ব্যবহার করেন।
তড়িৎচৌম্বকীয় বর্ণালী- সম্পাদনা (তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অনুক্রমে) গামা রশ্মি | রঞ্জন রশ্মি | অতিবেগুনী | দৃশ্য বর্ণালী | অবলোহিত | টেরা হার্তস বিকিরণ | মাইক্রওয়েভ | রেডিও ওয়েভ দৃশ্য (আলোক) বর্ণালী: বেগুনী | নীল | সবুজ | হলুদ | কমলা | লাল মাইক্রোওয়েভ ব্যান্ড: W band | V band | K band: Ka band, Ku band | এক্স ব্যান্ড | C band | এস ব্যান্ড | এল ব্যান্ড Radio spectrum: EHF | SHF | UHF | VHF | HF | MF | LF | VLF | ULF | SLF | ELF Wavelength designations : Microwave | Shortwave | Mediumwave | Longwave |
---|