মহাস্থানগড়
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর বা পুণ্ড্রবর্ধন। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানা থানায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] ইতিহাস
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল(১০৮২ -১১২৫) । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে । কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম । ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত। কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর যুদ্ধ হয়। (১২০৫ – ১২২০) যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন।
[সম্পাদনা করুন] দর্শনীয় স্থান
[সম্পাদনা করুন] মাজার শরীফ
মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছু পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয়। কথিত আছে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাহী সওয়ারেরর আগমন ঘটে।
[সম্পাদনা করুন] কালীদহ সাগর
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন।
[সম্পাদনা করুন] শীলাদেবীর ঘাট
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’ । শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন । এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।
[সম্পাদনা করুন] জিউৎকুন্ড
এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে । কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত।
[সম্পাদনা করুন] মিউজিয়াম
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
[সম্পাদনা করুন] বেহুলার বাসর ঘর
মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।
- মহাস্থান গড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বহু লোক সমাগম ঘটে। এখানকার দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার টাকা যা মাজার মসজিদের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
তথ্য সূত্র: মহাস্থানগড়ের ইতিহাস---তবিবুর রহমান