বাঙালি জাতি
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জাতি হিসেবে বাঙালির আছে এক সুপ্রাচীন অতীত। অবশ্য কবে কখন কীভাবে বাঙালি জাতির উদ্ভব ঘটেছে তা গবেষণালব্ধ।
ধারণা করা হয় সুপ্রাচীনকাল থেকেই এই ভূখণ্ডে অস্ট্রিক ভাষী প্রোটো-অস্ট্রালয়েড নরগোষ্ঠীর বাস ছিল। পরে ইন্দোচীন এবং তিব্বত অঞ্চল থেকে মঙ্গলীয় নরগোষ্ঠী আগমন করে। এদের জীবনধারার সাথে অস্ট্রিকদের মিল ছিল।পরস্পর ভাষাগত বিপরীতধর্মী দুটো নরগোষ্ঠীর একই ধরনের জীবনবোধ থাকার কারণে ঐক্য গড়ে ওঠে। এই অস্ট্রিক ও মঙ্গলীয় নরগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৭০০ বছরের সঙ্করায়ন প্রক্রিয়ায় বং/বঙ্গ নামের নরগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। ডঃ অতুল সুরের মতে "বয়াংসি" অর্থাৎ পক্ষী এদের টোটেম ছিল । এর পরের ইতিহাস আর্যদের ইতিহাস। আর্যদের একটি শাখা খাইবার পাস হয়ে উপমহাদেশে প্রবেশ করে। সঙ্গে করে নিয়ে আসে সংস্কৃত ভাষা, বৈদিক হিন্দুধর্ম এবং সামাজিক শ্রেণীপ্রথা। আগন্তুক আর্যদের সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় সংস্কৃতির মিলনের ফলে এক মিশ্র সাংস্কৃতিক রূপরেখা তৈরী হয় । যার সঙ্গে আরো যোগ হয় বৌদ্ধধর্মের (যাদের অনেকে পরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে মুণ্ডিত মস্তক বলে নেড়া বা নেড়ে আখ্যা পায়।)
আর্য সমাজের বর্ণ প্রথায় তিনটি বর্ণ বা জাত ছিল। এরা হলো ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং শূদ্র। উঁচু জাত ব্রাহ্মণ এবং নীচু জাত শূদ্র। এই অঞ্চলের আদি অধিবাসী অপেক্ষাকৃত কালোরা নীচু জাতে ঠাঁই পেল। উর্ধবতন ইংরেজ সরকারি কর্মকর্তা W W Hunter এর মতে "আজকের ব্রাহ্মণরা সম্ভবতঃ ৩০০০ বছরের বংশানুক্রমিক শিক্ষা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের ফসল। এরা এমন এক ধরনের মানুষ হিসেবে বিকশিত হয়েছে যা তাদের পারিপার্শ্বিক জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। লম্বা,পাতলা,দারুন নাক এবং ঠোটের গড়ন,সুশ্রী চেহারা বিস্তৃত কপাল এবং অনেকটা নারকেল আকৃতির খুলি আত্ম-সর্বস্ব পরিশীলিত একজন মানুষ-একজন ব্রাহ্মণ"। Hunter এই বর্ণনা আজকের বাংলাদেশের উপরতলার হিন্দু এবং মুসলমানদের সঙ্গে মিলে যায়।
এখানকার বেশিরভাগ মানুষই ব্রাহ্মণদের চাপিয়ে দেয়া শ্রেণী বর্ণ প্রথা পছন্দ করেনি। তাই বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবের পর অনার্য শ্রেণীর অধিকাংশ লোক বুদ্ধের শান্তিবাদী দর্শন মেনে নেয়। বৌদ্ধধর্ম শুধু আর্য এবং স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যেই সংহতি স্থাপন করেনি বরং এ অঞ্চলে অভিযানকারী অন্যান্য জাতি যেমন উত্তর দিক থেকে আসা হুনদের বংশধরদেরও একীভূত করেছিল। এই হুনদের উত্তরসুরীরা ভারতেরকুচবিহার রাজ্যে এবং বাংলাদেশের জেলা শহর রংপুরে এখনো এদের অস্তিত্ব রয়েছে। এদের বলা হয় কুচি।
বৌদ্ধ আধিপত্যের যুগে বৈদিক হিন্দুবাদ একেবারে ম্লান হয়ে যায়। তবে এগার শতকের দিকে আবার ব্রাহ্মণ্যহিন্দু সেনারা বৌদ্ধ পালদের পরাজিত করে গৌড় অধিকার করে। পরবর্তী দুশ বছর রাজ সমর্থন হারিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বৌদ্ধধর্ম ম্লান হয়ে যেতে থাকে। তবে দেশের মধ্যাঞ্চলে এবং পূর্বাঞ্চলে মুসলমানদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত বৌদ্ধধর্ম টিকে ছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে এখন ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৌদ্ধ বাস করছে।