টয়োটা
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টয়োটা জাপানী গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।
[সম্পাদনা করুন] ইতিহাস
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর করপোরেশনের টয়োটা শব্দটি এসেছে এ কম্পানি মালিকদের আদিপুরুষ উদ্ভাবকদের রাজা খ্যাত সাকিচি টয়োডার (Sakichi Toyoda) নাম থেকে৷ জাপানের নাগোয়ার (Nagoya) দক্ষিণ-পূর্বে মধ্য-দক্ষিণ হনসু (Honshu) অঞ্চলের কোরোমো (Koromo) নামের একটি শহর ছিল৷ ১৯৫৯ সালে এর নাম পাল্টে রাখা হয় টয়োটা সিটি (Toyota city)৷ অষ্টাদশ শতকের শেষ ও উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে এ শহরের বাসিন্দারা রেশমি কাপড়ের কাচামাল, রেশম গুটিউত্পাদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ বলা বাহুল্য, হাতে চালানো তাতে খুবই ধীর গতিতে রেশম গুটি থেকে তৈরি হতো রেশমি কাপড়৷ পরবর্তী সময়ে দেশ-বিদেশে রেশমি কাপড়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় সাকিচি টয়োডা (Sakichi Toyoda) নামের ওই শহরের এক বাসিন্দা মনোনিবেশ করেন যন্ত্রচালিত তাত উদ্ভাবনের দিকে৷ এ কাজে দুটো পয়সার মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি৷ নতুন কিছু করার আগ্রহের সৃষ্টি সেই থেকেই৷ এ আগ্রহ আরো বেড়ে যায় তার টয়োডা অটোমেটিক লুম কম্পানি উদ্ভাবিত এ রকম একটি মেশিনের পেটেন্ট বৃটেনের প্ল্যাট ব্রাদার্স (Platt Brothers)-এর কাছে ১০ লাখ ইয়েনে (Yen) (জাপানি মুদ্রা) বিক্রি থেকে৷ সে সময়ে প্রাপ্ত বিপুল ওই অর্থ সাকিচি টয়োডা বিনিয়োগ করেন গাড়ির ইঞ্জিন বানানোর কাজে৷ এ নতুন উদ্ভাবনী কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় সাকিচি টয়োডার ছেলে কিচিরো টয়োডাকে (Kiichiro Toyoda)৷ ১৯৩৫ সাল নাগাদ প্রথমবারের মতো এ-ওয়ান মডেলের গাড়ির ইঞ্জিন উদ্ভাবনে সক্ষম হন কিচিরো টয়োডা৷ এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি টয়োডা পরিবারকে৷
আনুষ্ঠানিকভাবে টয়োটা মোটর কম্পানি লিমিটেডের জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৮ আগস্ট৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উচ্চারণ সুবিধার বিবেচনায় টয়োডা (Toyoda) শব্দটিকে পাল্টে করা হয় টয়োটা (Toyota)৷ ১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বিদেশে অর্থাৎ আমেরিকায় গাড়ি বিক্রি শুরু করে এ কম্পানি৷ এর পরের বছরই তারা জাপানের বাইরে ব্রাজিলে গাড়ির কারখানা স্থাপন করে৷ এরপর তারা পর্যায়ক্রমে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে৷ বর্তমানে জাপানে টয়োটা মোটর কর্পরেশনের নিজস্ব ১২টি প্ল্যান্ট, ১১টি সাবসিডিয়ারি অ্যাফিলিয়েট ছাড়াও বিশ্বের ২৬টি দেশে মোট ৫১টি প্ল্যান্ট রয়েছে৷ এগুলোতে গড়ে প্রতি বছর ৫৫ লাখ গাড়ি তৈরি হয়৷ অর্থাত্ প্রতি ৬ সেকেন্ডে তৈরি হয় একটি করে টয়োটা গাড়ি৷ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা মোটর কর্পরেশনের সদর দফতর জাপানের টয়োটা সিটিতে৷ ২০০৪ সালের মার্চ নাগাদ বিশ্বব্যাপী এ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠানে মোট ২ লাখ ৬৪ হাজার লোক কর্মরত ছিল৷ ১৯৬৪ সাল নাগাদ প্রতি বছর টয়োটার বার্ষিক গাড়ি বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ লাখ ৬৪ হাজার৷ আর এগুলোর উত্পাদনও ছিল মূলত জাপানের টয়োটা সিটিকে ঘিরে৷ গত বছরের জুনে টয়োটার বার্ষিক গাড়ি বিক্রির পরিমাণ পৌছায় ৭৪ লাখে৷ এখন জাপানের বাইরে এ কম্পানি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ২৬টি দেশের ৫১টি কেন্দ্রে৷
[সম্পাদনা করুন] ভবিষ্যত পরিকল্পনা
যানবাহনের নিরাপত্তাকে দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়৷ এগুলোর একটি হচ্ছে সক্রিয় নিরাপত্তা৷ এটা নজর দেয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধের দিকে৷ অন্যটি হচ্ছে পরোক্ষ নিরাপত্তা যা সংঘর্ষকালে গাড়ির আরোহীদের রক্ষা করে৷ এ দুটো ক্ষেত্রেই টয়োটা প্রাগ্রসর প্রযুক্তির রেকর্ডধারী৷ গাড়ির স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ বা ভেহিকাল স্ট্যাবিলিটি কন্ট্রোল (VSC)-এর কথা ধরা যাক৷ এটা গাড়ির চাকার এদিক-ওদিকে ফসকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে৷ দূত গতিতে চলার সময় হঠাৎ বাক নিলে কিংবা বরফের ওপর দিয়ে চলার সময় ঘটতে পারে৷ অথবা সাসটেইনেবল রেসট্রেইন্ট সিস্টেম (SRS)-এর আবরণে ঢাকা এয়ারব্যাগের কথা ভাবা যেতে পারে৷ দুর্ঘটনার সময় এটা কুশনের মতো আরোহীদের মাথার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জানালার আঘাপ্রণা করতে পারে, সেজন্য এটা তাত্ক্ষণিকভাবে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে মাঝখানে কুশনের কাজ করে৷ বিষয়গুলো নিয়ে টয়োটা আরো অগ্রসর পরিকল্পনা করেছে৷ তারা ইঞ্জিন, ব্রেক, স্টিয়ারিং এবং অন্যসব নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে সমন্বিত করে তৈরি করেছে ভেহিকাল ডায়নামিক ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট (VDIM) সিস্টেম৷ এর মাধ্যমে গাড়ি সামের্থ্যর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছা পর্যন্ত গাড়িকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে৷ শুধু তাই নয় সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে যাচ্ছে টয়োটা৷ সংঘর্ষ পূর্ববর্তী নিরাপত্তা নামে ওই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হবে ক্যামেরা ও রেডার প্রযুক্তি৷ এটা সম্ভাব্য দুর্ঘটনার পূর্বাভাস দেবে৷ এ সিস্টেম সম্ভাব্য পরিণতি ঠেকাতে অথবা সংঘর্ষ এড়াতে চালককে কৌশলী করে তুলবে৷ কম্পানির নতুন প্রসিডেন্ট কাতসুয়াকি ওয়াতানাবির চিন্তা-ভাবনা অনুয়ায়ী ভবিষ্যতে গাড়িতে হয়তো তন্দ্রা প্রতিরোধক সিস্টেমও উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে৷ এর ফলে দীর্ঘ ভ্রমণকালে আরোহীর তন্দ্রা ভাব ফেরানো যাবে৷ এমনকি মদপান করে গাড়ি চালানো প্রতিরোধের পন্থার কথাও ভাবা হচ্ছে৷ এতে করে এ রকম মাদকাসক্ত কোনো ব্যক্তি গাড়ি চালকের আসনে বসলে গাড়ি চলবে না অথবা নিজ থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে৷ টয়োটা গাড়ি নিয়ে ওয়াতানাবির ভবিষ্যত্ ভাবনা এখানেই থেমে নেই৷ তার স্বপ্ন এমন একটি আদর্শ গাড়ি তৈরির যা তার ভাষায়, এটা হবে এমন একটি গাড়ি প্রতিবারই চালানোর সময় তা বায়ু পরিশোধন করবে৷ আরো উত্সাহী হয়ে তিনি বলেন, এমন একটি গাড়ি যা দুর্ঘটনা ও আঘাতকে একই সঙ্গে প্রতিরোধ করার মধ্য দিয়ে মানসিক চাপ কমিয়ে যাত্রীদের আরো স্বাস্থ্যবান করবে৷