জর্জ ওয়াশিংটন কার্ভার
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জর্জ ওয়াশিংটন কার্ভার (জন্ম-১৮৬৪-৫ জানুয়ারি, ১৯৪৩) আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষিবিদ। একজন দাস হিসেবে জন্ম গ্রহণ করলেও, জীব জগৎ নিয়ে তার আকর্ষণ তাকে একজন বিশ্ববিখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। তিনি কাঠ বাদাম হতে প্রায় শতাধিক পণ্য উৎপাদনের পদ্ধতি আবিস্কার করেন।
জর্জ কার্ভার ১৮৬৪ সালে ডায়মন্ড গ্রোভ (মিসৌরি) এ মোসেস কার্ভারের ফার্মে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সমস্যাপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল সময়ে জন্মগ্রহন করেন। সময়টা ছিল আমেরিকার গৃহযুদ্ধের শেষ সময়। শিশু জর্জ ও তার মাকে ডাকাতরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা তাদের আরাকান্স এ বিক্রি করে দেয়। তার পিতার নাম জানা যায় না। কিন্তু তিনি বলেন তার পিতা পার্শবর্তি ফার্মের কোন দাস ছিলেন। মোসেস এর খামারে জর্জ প্রথম প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন। সেখান থেকেই তার নাম হয় "গাছের চিকিৎসক। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় বার বছর বয়সে, এর ফলে তিনি তার পালক পিতা-মাতাকে ছাড়তে বাধ্য হন।
কারণ তখন সেখানে কাল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কোন স্কুল ছিল না। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম মিসৌরির নিউটন কাউন্টিতে চলে আসেন। সেখানে তিনি একটি খামারে কাজ করতেন এবং একটি এক কক্ষের স্কুলে কাজ করতেন। সেখান থেকে তিনি কান্সাসে মিননিয়াপুল্স হাই স্কুলে ভর্তি হন। বর্ণের কারণে কলেজে ভর্তি কঠিন হয়ে পরে। ত্রিশ বছর বয়সে কার্ভার ইন্ডিয়ানোলা (আইওয়া) -এ সিম্পসন কলেজে ভর্তির অণুমতি লাভ করেন। সেই স্কুলে তিনিই প্রথম কালো ছাত্র ছিলেন। স্কুলে কার্ভারের পিয়ানো ও শিল্প বিষয়ে শিখতে হত, কারণ কলেজে বিজ্ঞান বিষয় ছিল না। বিজ্ঞান শেখার উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৯১ আইওয়া কৃষিবিজ্ঞান কলেজে চলে যান। সেখান থেকে তিনি ১৮৯৪ সালে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি ব্যাক্টেরিয়াল উদ্ভিদবিজ্ঞান ও কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। কার্ভার আইওয়া স্টেট কলেজ অফ এগ্রিকালচার আন্ড মেকানিক্স-এ শিক্ষকতা শুরু করেন। ঐ কলেজের তিনিই প্রথম কালো শিক্ষক।
জর্জ কার্ভার টুস্কিতেই প্রথম তার শস্য-আবর্তনের (crop rotation) উপায় আবিস্কার করেন। এই পদ্ধতি দক্ষিন যুক্তরাজ্যের কৃষিতে বিপ্লবের সূচনা করে। এই পদ্ধতিতে জমির নাইট্রোজেন কমে গেলে, পরবর্তি বছর নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী অন্য উদ্ভিদ যেমন, শিম, মটরশুটি, বাদাম ইত্যাদির চাষ করা হয়। ফলে জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমান আবার ঠিক হয়ে যায়। এই সময়ে আমেরিকার অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষি নির্ভর ছিল, ফলে কার্ভারের এই আবিস্কার অর্থনীতিতে বিষেশ ভূমিকা রাখে। যুগের পর যুগ ধরে দক্ষিণ যুক্তরাজ্যে তুলা ও তামাক উৎপাদনের ফলে জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছিল।
কার্ভার কৃষিশস্যের বানিজ্যিক ব্যবহার নিয়েও কাজ করেন। তিনি উদ্ভিজ পদার্থ হতে প্রায় ৫০০ বিভিন্ন বর্ণের রং প্রস্তুত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার এই আবিস্কার ইউরোপ হতে রং আমদানির একটি বিকল্প হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯২৭ সালে তিনি সয়াবিন থেকে রং ও স্টেইন (জীববিজ্ঞানের কাজে ব্যবহৃত রং) তৈরি করেন। এর জন্য তিনি তিনটি আলাদা পেটেন্ট লাভ করেন।
কার্ভার তার বেশির ভাগ আবিস্কারকে নিবন্ধিত করেন নাই, যার ফলে তিনি সেগুলো থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারতেন। তার বেশির ভাগ আবিস্কার তিনি মানবকল্যানের উৎসর্গ করেন। এই ব্যাপারে তিনি বলেন "সৃষ্টিকর্তা এগুলো আমাকে দান করেছেন, আমি কি করে এগুলো বিক্রি করতে পারি। ১৯৪০ সালে কার্ভার তার সকল অর্থ টুস্কি তে কার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টায় দান করেন।
তিনি দক্ষিণ যুক্তরাজ্যকে শুধু তুলা উৎপাদনের পথ থেকে সরিয়ে বিভিন্ন শস্য উৎপাদনের অঞ্চলে পরিনত করেন।
জর্জ ওয়াশিংটন কার্ভারকে ১৯২৮ সালে সিম্পসন কলেজ সম্মানিত ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। দক্ষিণ যুক্তরাজ্যের কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ১৯৩৯ সালে তিনি রুজভেল্ট পদক লাভ করেন। ১৪ জুলাই ১৯৪৩ আমেরিকান প্রসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট তাকে জাতীয় পদকে সম্মানিত করেন। মিসৌরির ডায়মন্ড গ্রোভকে কার্ভারের সম্মানে একটি উদ্যান হিসেবে সংরক্ষিত করা হয়েছে।
Categories: অসম্পূর্ণ | জীবনী | জীব বিজ্ঞানী | কৃষিবিদ | ১৮৬৪-এ জন্ম | ১৯৪৩-এ মৃত্যু