সক্রেটিস
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সক্রেটিস (প্রাচীন গ্রিক ভাষায় Σωκράτης সক্রাত্যাস্) (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৯ - খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯) প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক। এই মহান
দার্শনিকের সম্পর্কে তথ্য লিখিতভাবে পাওয়া যায় কেবল মাত্র তাঁর শিষ্য প্লেটো-র ডায়ালগ এবং সৈনিক জেনোফন এর রচনা থেকে। তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়ে তাঁকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
[সম্পাদনা করুন] প্রাথমিক জীবন
সক্রেটিস আনুমানিক ৪৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রীসে এলোপাকি গোষ্ঠীতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সাফ্রোনিস্কস্। তাঁর মাতা ফেরানিটি ছিলেন একজন ধাত্রী। যৌবনে সক্রেটিস পিতার জীবিকা ভাস্কর্য তৈরিকে তাঁর পেশা হিসেবে নেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সক্রেটিস প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন। পরে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। উল্লেখ্য সেই সময়ে শুধুমাত্র সম্পদশালীরাই সেনাবাহিনীতে কাজ করতে পারত। পেলোপনিশীয় যুদ্ধে আসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলের পিতা ছিলেন।
[সম্পাদনা করুন] দর্শন
সক্রেটিস অত্যন্ত জ্ঞানপিপাসু ছিলেন। সক্রেটিসের মতে জ্ঞান হচ্ছে জিজ্ঞাসা। জ্ঞান সম্পর্কে তার অনেক বিখ্যাত উক্তি রয়েছে:
অপরিক্ষীত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা গ্লানিকর।
পোষাক হলো বাইরের আবরণ, মানুষের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে তার জ্ঞান.
নিজেকে জান।
টাকা বিনিময়ে শিক্ষা অর্জনের চেয়ে অশিক্ষিত থাকা ভাল।
জ্ঞানের শিক্ষকের কাজ হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে তার কাছ থেকে উত্তর জেনে দেখানো যে জ্ঞানটা তার মধহ্যেই ছিল।
তারা জানে না যে তারা জানে না, আমি জানি যে আমি কিছু জানি না।
(নিজেদের জ্ঞানী দাবীকারিদের সাথে তার নিজের পার্থক্য সম্পর্কে)
সেই সময়ে যারা নিজেদের জ্ঞানী দাবি করতেন তাদেরকে তিনি একের পর এক প্রশ্নবানে জর্জরিত করে বুঝিয়ে দিতেন যে তারা আসলে কতটুকু জানে। ক্রমাগত প্রশ্ন করে করে কোনো সমস্যার সমাধান করার পদ্ধতিকে ডায়ালেকটিক পদ্ধতি বা সক্রেটিসীয় পদ্ধতি নামে পরিচিত। সক্রেটিস দেখতে আকর্ষনীয় ছিলেন না। তিনি খুব সাদাসিধা জীবন যাপন করতেন। সাধারণ পোষাক পরতেন, খালি পায়ে ঘুরতেন। সেই যুগের অভিজাত তরুণরা তাঁর আদর্শ ও ব্যক্তিত্বের প্রতি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হয়। তাঁর শিষ্য প্লেটো পরবর্তীতে বিখ্যাত দার্শনিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।
[সম্পাদনা করুন] মৃত্যু
সক্রেটিসের প্রথাবিরুদ্ধতা, সে সময়ের রাষ্ট্রনীতির অসংগতির কথা, ধর্মীয় সংস্কারের সমালোচনা সেই সময়ের শাসকদেরকে তাঁর প্রতি বিরাগভাজন করে তোলে। তরুণদের বিপথগামী করছেন এই অজুহাতে সক্রেটিসকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এবং তাঁর মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তবে বলা হয় শাসকদের কাছে ক্ষমা চাইলে এবং প্রচলিত ধর্ম ও রাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে কথা না বলার অঙ্গীকার করলে তিনি মুক্তি পাবেন। তিনি সক্রেটিস তা করেননি। তাঁর শিষ্যরা তার পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেও তিনি পালিয়ে যাননি। রাষ্ট্রের নিয়ম তিনি অমান্য করবেন না বলে বিচারকদের দেয়া দন্ডাদেশ অনুযায়ী হেমলক বিষ পানে মৃত্যুবরণ করেন।