জুলু
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জুলু | |
---|---|
উনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশের জুলু যোদ্ধারা (পিছনে কিছু ইউরোপিয়ান যোদ্ধাও আছে) |
|
মোট জনসংখ্যা | ১ কোটি ৪ লক্ষ (২০০১ সালের অনুমান ১) |
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগণ অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ | কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশ: ৭৬ লক্ষ গটেং প্রদেশ: ১৯ লক্ষ |
ভাষা | জুলু, এছাড়াও রয়েছে ইংরেজি বা আফ্রিকান বা পর্তুগীজ অথবা ঝোসার মত অন্যান্য আফ্রিকান উপজাতীয় ভাষা। |
ধর্ম | খৃস্টান, মূর্তিপূজক |
সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপজাতিসমূহ | বান্টু
উনগুনি বাসোথো ঝোসা সোয়াজি মাটাবেলি |
জুলু প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ লোকের একটি জনগোষ্ঠীর নাম যাদের বসবাস আফ্রিকা মহাদেশে। তাদের মূল বসতি হল দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশে (Kwa-Zulu Natal)। তারা জুলু ভাষায় কথা বলে যা বান্টু ভাষা পরিবার থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। তবে জুলু ভাষার সবচেয়ে সমসাময়িক পূর্বপুরুষ হল উনগুনি (Nguni) নামক একটি উপ মানব গোষ্ঠীর ভাষা। উনবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে জুলুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তখন কৃষ্ণকায় জুলুদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে দেখা হত। কিন্তু বর্তমানে তারা সর্ববৃহৎ পৌত্তলিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত এবং তাদের অধিকার বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] ইতিহাস
[সম্পাদনা করুন] উৎপত্তি
জুলুদের উৎপত্তি উত্তর কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশের একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে। জুলু জাতির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয় জুলু কান্টোমভেলাকে যিনি ১৭০৯ সালে জুলু জাতির গোড়াপত্তন করেন। তখন এই প্রদেশটিতে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উনগুনি জ্ঞাতিগোষ্ঠীর বসতি ছিল যাদের অপর নাম হল ইমজি।
[সম্পাদনা করুন] রাজ্যের পত্তন ও উত্থান
[সম্পাদনা করুন] শাকার অধীনে জুলু রাজত্বের উত্থান
শাকা জুলু ছিলেন জুলুদের প্রধান নেতা সেনযানগাকোনার (Senzangakona) অবৈধ সন্তান। তিনি ১৭৮৭ সালে জন্মগ্রহন করেন। সেনযানগাকোনা সে এবং তার মাকে নির্বাসনে পাঠায় এবং তারা উদ্বাস্তু হিসেবে থেথোয়াদের (Mthethwa) আশ্রয় লাভ করে। শাকা থেথোয়া প্রধান ডিংগিশোইয়োর (Dingiswayo) অধীনে যুদ্ধ করেন। সেনযানগাকোনার মৃত্যুর পর ডিংগিশোইয়ো জুলুদের প্রধান হবার জন্য শাকাকে সাহায্য করে এবং শাকা প্রধান হন। তারা দুজনে সর্বদাই সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায়। কিন্তু এক যুদ্ধে রাজা জোইদে (Zwide) কর্তৃক ডিংগিশোইয়ো নিহত হয়। এরপর থেথোয়ারা শাকাকে রাজা মেনে নেয় এবং তারা সবাই জুলু নামধারণ করে।
শাকা ডিংগিশোইয়োর বাহিনীকে চূড়ান্ত পর্যায়ের নীতিমালা ও কৌশলের মাধ্যমে পুনর্গঠিত করে এবং জুলু নিয়ন্ত্রিত এলাকার আয়তন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৃহৎ এক জুলু রাজত্ব কায়েম করে। এই সময় সংঘটিত বেশ কিছু যুদ্ধ জুলুদের গৃহযুদ্ধের অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে জুলুরা টুগেলা এবং পনগোলা নদীর মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে এক বিশাল রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। এই সম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার কারণে জুলু এলাকার আশেপাশে বসবাসকারী বহু জাতিগোষ্ঠীকে নিজ এলাকা থেকে অনিচ্ছায় চলে যেতে হয় অর্থাৎ তাদেরকে বিতারণ করা হয় যা ইতিহাসে ফেকানের ঘটনা (Occurance of Mfecane) হিসেবে স্বীকৃত।
[সম্পাদনা করুন] ডিনগানের রক্তাক্ত অভ্যূত্থান
শাকাকে হত্যা করে তার পর সিংহাসনে আরোহন করে তারই সৎ ভাই ডিনগান। ডিনগান শাকার অপর সৎ ভাই উমলাঙ্গানার সহযোগিতা নিয়েছিল। সিংহাসনে আরোহনের পর ডিনগানের প্রথম কাজ ছিল নিজের আত্মীয়দের রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান। এরপর ডিনগান শাকার কিছু সমর্থককেও রাষ্ট্রীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করে যাতে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারে। এসময় ডিনগান সব দিক দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য প্রত্যেককে যাচাই বাছাই করেন। কিন্তুই এই কাটছাট প্রক্রিয়ায় পান্ডাকে ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি যে ডিনগানের অপর সৎভাই ছিল। আসলে পান্ডা যে ভীতির কারণ হতে পারে তা তখন কেউ অনুমান করেনি।
[সম্পাদনা করুন] ভুরত্রেকারদের সাথে ডিনগানের বিরোধ এবং পান্ডার সিংহাসনে আরোহন
১৮৩৭ সালের অক্টোবর মাসে ভুরত্রেকারদের নেতা পিট রেটিফ ডিনগানের রাজকীয় ক্রালে (প্রথাগত আফ্রিকান গৃহ) আসেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ভুরত্রেকারদের জন্য একটি ভূমিখন্ড প্রদানের ব্যাপরে ডিনগানকে রাজি করানো। নভেম্বর মাসে ভুরত্রেকারদের প্রায় ১০০০ টি ওয়াগন (ঘোড়াচালিত যান যা দ্রব্য আনা নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়) হঠাৎ ড্রাকেন্সবার্গ পাহাড়ের দিকে আসতে থাকে। তারা অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট থেকে এসেছিল এবং ড্রাকেন্সবার্গে প্রবেশের মাধ্যমে তারা কোয়া জুলু নাটাল প্রদেশে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করে।
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ডিনগান রেটিফের কাছে তার এলাকা থেকে ভুরত্রেকারদের আঞ্চলিক গুটিকয়েক নেতা কর্তৃক ছিনতাইকৃত গরু ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানায়। রেটিফের দলের লোকেরা মিলে ১৮৩৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ডিনগানের সে দাবী পূরন করে। পরদিন ডিনগান এবং রেটিফের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে ডিনগান টুগেলা নদীর দক্ষিণ থেকে জিমভুবু নদী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা ভুরত্রেকারদের অধীনত্বে ছেড়ে দেয়। এ উপলক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে এক আনন্দোৎসবের আয়োজন করা হয় এবং উৎসব শেষে রেটিফের লোকদেরকে নাচের আমন্ত্রন জানানো হয়। ডিনগানের কথায় তারা অস্ত্র ফেলে দিয়ে নাচে অংশগ্রহন করে। নাচের এক পর্যায়ে ডিনগান তার পায়ের উপর ভর দিয়ে লাফিয়ে উঠে এবং চিৎকার করে বলে, "বাম্বানি আবা থাকাথি" অর্থাৎ, "জাদুকরগুলোকে হত্যা করো"। এর সাথে সাথেই রেটিফের দলের সবাইকে নিকটবর্তী কোয়া-মাটিওয়ান পাহাড়ে নিয়ে বন্দী করে রাখা হয়। এটিই সাধারণ বিশ্বাস যে দাবীকৃত কয়েকটি গরু ফিরিয়ে না দেয়ার কারণে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকান্ডের পর ডিনগানের সেনাবাহিনী কাছাকাছি স্থানে বসবাসকারী প্রায় ৫০০ ভুরত্রেকার নারী পুরুষের একটি দলের উপর আক্রমন চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এই ঘটনার স্থানটিকে বর্তমানে উইনেন (Weenen: ডাচ ভাষায় যার অর্থ: কাঁদা) নামে অভিহিত করা হয়।
এরপর জীবিত ভুরত্রেকাররা আন্দ্রিস প্রেটোরিয়াসকে নতুন নেতা নির্বাচিত করে। ১৮৩৮ সালের ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে ৪৭০ জন ভুরত্রেকারদের একটি জনপদে হামলা চালায় যা ব্লাড রিভার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধে প্রেটোরিয়াসের নোতৃত্বে ভুরত্রেকারদের কাছে ডিনগানের বাহিনী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এই যুদ্ধের পর ডিনগান তার রাজকীয় সকল সম্পত্তি পুড়িয়ে দিয়ে উত্তরের দিকে পালিয়ে যায়। এই সুযোগে ডিনগানের সৎ ভাই পান্ডা ১৭,০০০ সৈন্যের একটি দল নিয়ে স্বদেশ ত্যাগ করে এবং প্রেটোরিয়াস ও ভুরত্রকার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ডিনগানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ডিনগান আধৃনিক সোয়াজিল্যান্ড সীমান্তের নিকটে নিহত হয়। এরপর পান্ডা জুলু জাতির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
[সম্পাদনা করুন] কেটেওয়্যায়োর অধিষ্ঠান
ডিনগানের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর ১৮৩৯ সালে ভুরত্রেকাররা প্রেটোরিয়াসের নেতৃত্বে নাটালিয়াতে বো প্রজাতন্ত্র গঠন করে। এটি ছিল থুকেলার দক্ষিণে এবং পোর্ট নাটালের ইংরেজ বসতির (বর্তমান ডারবান)পশ্চিমে। পান্ডার সাথে প্রেটোরিয়াসের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান ছিল। ১৯৪২ সালে ইংরেজরা বোদেরকে আক্রমন করে এবং নাটালিয়া দখল করে নেয়। এই প্রেক্ষাপটে পান্ডা ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে এবং তাদের আনুগত্য স্বীকার করে।
১৮৪৩ সালে পান্ডা রাজ্যের মধ্যে দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত একটি শ্রেণীগোষ্ঠীকে রাজ্য হতে অপসারণের আদেশ দেয়। এতে প্রচুর মানুষ হতাহতের শিকার হয় এবং অনেক শরণার্থী পার্শবর্তী রাজ্যসমূহে আশ্রয় নেয়। অনেকে ইংরেজ শাসিত নাটাল প্রদেশেও আশ্রয় নেয়। পান্ডা প্রবল পরাক্রমে অনেক প্রদেশ ও রাজ্য দখল করে নিতে থাকে। ১৮৫৬ সালে সোয়াজিল্যান্ড পান্ডার দখলে আসে। ইংরেজ প্রশাসন তাকে এই আগ্রাসী আক্রমন বন্ধের জন্য বললেও পান্ডা তা অনেকাংশেই অগ্রাহ্য করে।
এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগেই পান্ডার দুই পুত্র কেটেওয়্যায়ো এবং উমবেলাজি সিংহাসন দখলের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। ১৮৫৬ সালে চূড়ান্ত রকমের যুদ্ধে উমবেলাজি নিহত হয় এবং কেটেওয়্যায়ো অবৈধভাবে পিতার শাসনভার পরিচালনা করতে থাকে। পান্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে কেটেওয়্যায়োকে ক্ষমতা দেননি কারণ তার ইচ্ছা ছিল তার প্রিয় সন্তান উমবেলাজিই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোক। এমনকি দুই ভাইয়ের লড়ায়ের সময়ন তিনি যখন উমবেলাজির পরাজয়ের আশংকা করেন তখন তার জীবন রক্ষার্থে কম চেষ্টা করেননি; পুরো এক প্লাটুন রাজকীয় সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। তাদের দায়িত্ব ছিল উমবেলাজির পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তার প্রাণ রক্ষার্থে যুদ্ধ করা। যাহোক, ১৮৭২ সালে পান্ডার মৃত্যুর পর কেটেওয়্যায়ো পূর্ণ শাসনক্ষমতা দখল করে।
[সম্পাদনা করুন] রাজ্যের পতন
[সম্পাদনা করুন] অ্যাংলো-জুলু যুদ্ধ
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: অ্যাংলো-জুলু যুদ্ধ
১৮৭৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে ইংরেজ প্রতিনিধিদল কেটেওয়্যায়োর প্রতিনিধিত্বকারী ১৪ জন গোষ্ঠী প্রধানের নিকট একটি চরমপত্র পেশ করে। চর,মপত্রের শর্তাবলি ছিল অযৌক্তিক এবং কেটেওয়্যায়োর কাছে সেগুলোকে অগ্রহনযোগ্য মনে হয়। এ থেকেই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ইংরেজরা ডিসেম্বরের শেষদিকে থুকেলা নদী পার হয়ে কেটেওয়্যায়োর সম্রাজ্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৮৭৯ সালের প্রথম দিকে যুদ্ধের সূচনা হয়। প্রথম পর্যায়ে ২২ জানুয়ারি তারিখে সংঘটিত ইসান্ডলোয়ানার যুদ্ধে (Battle of Isandlwana) জুলুরা ইংরেজদের পরাজিত করে। কিন্তু ৪ জুলাই তারিখে সংঘটিত উলুন্ডির যুদ্ধে জুলুদের পরাজয়ের মাধ্যমে অ্যাংলো-জুলু যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
[সম্পাদনা করুন] বিভাজন এবং কেটেওয়্যায়োর মৃত্যু
জুলুদের পরাজয়ের এক মাস পর কেটেওয়্যায়োকে আটক করা হয় এবং ইংরেজরা তাকে কেপ টাউনে নির্বাসিত করে। ইংরেজ প্রশাসন জুলুল্যান্ডকে অনেকগুলো উপরাজ্যে বিভক্ত করে এবং প্রতিটি রাজ্যের শাসনভার একজন করে পাতিরাজার (Kinglet) উপর অর্পণ করে। এইসব উপরাজ্যের মাঝে একসময় যুদ্ধ শুরু হয়। ১৮৮২ সালে কেটেওয়্যায়োকে ইংল্যান্ড ভ্রমনের অনুমতি দেয়া হয়। এই সফরের সময় তিনি রাণী ভিক্টোরিয়া সহ অন্যান্য অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাত করেন এবং পরবর্তীতে আবার জুলুল্যান্ডে ফিরে আসার অনুমতি পান।
১৮৮৩ সালে কেটেওয়্যায়োকে আবার ক্ষমতায় বসানো হয়। তার ক্ষমতার অধীনে একটি সংরক্ষিত নিরপেক্ষ অঞ্চল দেয়া হয় যার আয়তন তার পূর্বতন রাজ্যের তুলনায় অনেক কম ছিল। পরবর্তীতে কেটেওয়্যায়ো উলুন্ডিতে ১৩ জন পাতিরাজার একজন উজিমভেবু কর্তৃক আক্রান্ত হন। এই যুদ্ধ বো জাতির ভাড়াটে যোদ্ধারা উজিমভেবুর সাথে যোগ দেয়। এতে কেটেওয়্যায়ো আহত অবস্থায় পলায়ন করে। ১৮৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেটেওয়্যায়ো মৃত্যুবরণ করে। তার পুত্র ডিনিজুলু পরবর্তী রাজা হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়; তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।
[সম্পাদনা করুন] ডিনিজুলু এবং বো জাতির ভাড়াটে যোদ্ধাদল
উজিমভেবুকে আক্রমন করার জন্য ডিনিজুলু বো জাতির যোদ্ধাদের ভাড়া করে এবং প্রতিদান হিসেবে তাদেরকে ভূমি প্রদানের আশ্বাস দেয়। এই যোদ্ধাদল নিজেদেরকে "ডিনিজুলুর স্বেচ্ছাসেবক" হিসেবে পরিচয় দিত এবং তাদের নেতৃত্বে ছিল লুই বোথা। ডিনিজুলুর স্বেচ্ছাসবকেরা ১৮৮৪ সারে উজিমভেবুর সেনাদলকে পরাজিত করে এবং তাদের ন্যায্য ভূমির দাবী জানায়। তারা বিনিময়ে জুলুল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক ভূমি লাভ করে যা বিভিন্ন ব্যক্তির নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ জমিই ছিল আবাদযোগ্য। এই বিশাল অঞ্চল নিয়ে তারা একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে। এই ঘটনায় বৃটিশরা সতর্ক হয়ে য্য় এবং একে সহজচে মেনে নিতে পারেনি। ১৮৮৭ সালে তারা জুলুল্যান্ড দখল করে নিয়েছিলো। এসব যুদ্ধের সাথে ডিনিজুলু সম্পৃক্ত ছিল এবং এর ফলে তাকে আটক করা হয় এবং বিশ্বাসঘাতকতা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং গণ সহিংসতার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। ১৮৮৯ সালে ডিনিজুলুকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল।
[সম্পাদনা করুন] আপারঠাইটের বর্ষসমূহ
[সম্পাদনা করুন] কোয়া জুলু
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: কোয়া-জুলু
পৃথকীকরণ নীতির (Apartheid) আওতায় জুলু জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নিজস্ব আবাসভূমি তৈরী করা হয়েছিল যার নাম দেয়া হয় কোয়া-জুলু। ১৯৭০ সালে বান্টু মাতৃভূমি নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে বলা হয় যে, জুলু জনগোষ্ঠীর সবাইকে দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকত্ব ত্যাগ করে কোয়া জুলুর নাগরিক হতে হবে। কোয়া-জুলুর বাইরে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ জুলুকে জোরপূর্বক কোয়া জুলুর ভিতরে আনা হয়। ১৯৯৩ সালে কোয়া জুলুতে ৫২ লক্ষ জুলু বসবাস করতো এবং এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যান্য স্থানে বসবাসকারী জুলুদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ২০ লক্ষ। কোয়-জুলু হল গুটিকতক বিচ্ছিন্ন ভূমিখন্ডের সমষ্টি যার বর্তমান নাম কোয়া-জুলু নাটাল ১৯৭০ সালে কোয়-জুলুর প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর প্রধান মন্ত্রী (Chief Minister) ছিল মাংগোসুথু বুথেলেজি (Mangosuthu Buthelezi). ১৯৯৪ সালে কোয়া-জুলুকে নাটাল প্রদেশের সাথে যুক্ত করে কোয়া-জুলু নাটাল প্রদেশ গঠিত হয়।
[সম্পাদনা করুন] ইনকাথা
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: ইনকাথা ফ্রিডম পার্টি
১৯৭৫ সালে বুথেলেজি ইনকাথা ইয়া কোয়া-জুলু নামে একটি দল গঠন করে যা ছিল আনকাথা ফ্রিডম পার্টির পূর্বসূরি। এটি মূলত রাজ্য পৃথকীকরণ প্রতিরোধের একটি আন্দোলন হিসেবে জন্মলাভ করেছিল; তবে অন্য দল ANC এর তুলনায় এই দলের চিন্তাধারা ছিল বেশ রক্ষণশীল। যেমন ইনকাথা সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে ছিল। প্রথমদিকে ইনকাথার সাথে ANC এর সুসম্পর্ক থাকলেও ১৯৮০ সালের পর থেকে এই সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। কারণ ইনকাথার চিন্তাধারা অনেকটা পৃথকীকরণের হোতা বৃটিশ সরকারের মর্জি অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছিল। তবে একথা অস্বীকার করার কোন উপায় ছিলনা যে সরকারের কাছে কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র দল ছিল ইনকাথা। ANC এবং এধরণের অন্যান্য আন্দোলন নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সরকার থেকে পাওয়া এই সমর্থনই ইনকাথাদেরকে অর্থ মজুদ বৃদ্ধি এবং গেরিলা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুদ্ধের যথাযোগ্য প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেছিল।
[সম্পাদনা করুন] রাজনৈতিক সহিংসতা
১৯৮৫ সাল থেকে বিরুদ্ধবাদী আন্দোলন সশস্ত্র রুপ নিতে শুরু করে এবং এর ফলে রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। বিরোধীরা তখন থেকেই এ কে ৪৭ রাইফেল ব্যবহার শুরু করে। প্রথমদিকে ইনকাথা এবং ANC এর মধ্যে সহিংসতা শুরু হয় এবং উভয়পক্ষই ব্যাপক হতাহতের সৃষ্টি করে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এই যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ইন্ধন কাজ করেছিল; একাজে যেই দল অংশগ্রহন করে তাদেরকে "তৃতীয় শক্তি" বলা হয়। পুরো আশির দশক জুড়ে এই সহিংসতা অব্যাহত থাকে এবং নব্বইয়ের দশকে তা আরও বেগবান হয়। পরিশেষে ১৯৯৪ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
[সম্পাদনা করুন] আধুনিক জুলু জনগোষ্ঠী
আধুনিক জুলু জনগণ শহর এবং গ্রাম উভয় অঞ্চলেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করে। যদিও কোয়-জুলু নাটালই এখনও তাদের মাতৃভূমি হিসেবে স্বীকৃত, তথাপি জুলুদের অনেকেই এখন পার্শ্ববর্তী গটেং প্রদেশের তুলনামূলক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেখে সেখানে বসতি গড়েছে। অবশ্য এই প্রদেশেরও সবচেয়ে বেশী কথিত ভাষা হচ্ছে জুলু ভাষা।
জুলুরা দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিতেও উল্লেকযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রাক্তন এবং বর্তমান উভয় উপ রাষ্ট্রপতিই ছিলেন জুলু জাতির। তারা হলেন যথাক্রমে জ্যাকব জুমা এবং ফুমজিল উমলাম্বো-উংগুকা (Phumzile Mlambo-Ngcuka)।
[সম্পাদনা করুন] সঙ্গীত
জুলু এবং তাদের সাথে উনগুনি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগত সঙ্গীত বিশেষ প্রশংসার দাবীদার। বিশেষ করে আফ্রিকার সকল মানুষেরই একটি সাধারণ বিশ্বাস হল গানের মাধ্যমে আবেগ ও অনুভূতির যে বহিঃপ্রকাশ এবং আদান প্রদান ঘটানো সম্ভব তা কথোপকথন বা এরকম অন্য কিছুর দ্বারা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। জুলু সঙ্গীতে সুর, তাল এবং লয়ের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে, বিশেষত লয়ের মূর্ছনা। জুলুরা লয়কে সাধারণত ইসিগুবুডু নামে অভিহিত করে থাকে যার অর্থ করা যেতে পারে; পশুর উন্নত শিং, নিগূঢ় অনুভূতি ইত্যাদি। মাসকান্ডা এবং উমবাকাঞ্জা অন্য দুটি প্রভাবশালী জুলু সঙ্গীতধারা। কয়েকজন সুপরিচিত ও বিখ্যাত মাসকান্ডি সঙ্গীতশিল্পীর মধ্যে রয়েছে, ফুজেখেমেসি এবং ফাজোমনিয়ামা।
জুলু সঙ্গীত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বেশ পরিচিতির দাবীদার; কারণ অনেক সময়ই শেতাঙ্গ গায়কেরা তাদের গানের সাথে জুলু গায়কদের সহকারী গায়ক হিসেবে নিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে জুলু সঙ্গীত নির্মাতাদের অনেক গানই পরদেশীরা গেয়ে থাকেন। এর একটি উদাহরণ হল পল সাইমন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জনি ক্লেগ। জনি ক্লেগের এ ধরণের একটি গান হল Wimoweh। ক্লেগের এ ধরণের আরো কিছু গান সুর বিখ্যাত ব্যান্ড দল বাউ ওয়াউ ওয়াউ এর একটি অ্যালবামে স্থান পেয়েছিল। বাউ ওয়াউ ওয়াউ এবং জনি ক্লেগের গান ছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই জুলু সঙ্গীত অবহেলার শিকার হয়ে এসেছে এবং অনেকটাই সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে।
তবে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে সফল একমাত্র জুলু গায়ক দল লেডিস্মিথ ব্ল্যাক মাম্বাজো জুলু সঙ্গীত এবং প্রথাকে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় করতে সমর্থ হয়। পল সাইমনের গ্রেসল্যান্ড নামক অ্যালবামে কাজ করে সফলতা পাওয়ার পর তারা অনেক তারকা নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করে এবং দুই দুই বার গ্র্যামি পুরস্কার লাভ করে।
[সম্পাদনা করুন] ভাষা
এই বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য দেখুন: জুলু ভাষা
জুলু জনগোষ্ঠীর ভাষা হল জুলু বা ইসিজুলু যা বান্টু ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। আরো নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে জুলু ভাষা হল বান্টু ভাষার উনগুনি উপগোষ্ঠীর ভাষাশ্রেণীর অন্তর্গত। জুলু দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশী কথিত ভাষা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক মানুষই এই ভাষা বুঝতে পারে। অনেক জুল জনগণ আবার ইংরেজি, পর্তুগীজ, সেসোথো ইত্যাদী ভাষায় কথা বলে যার সবগুলোই দক্ষিণ আফ্রকিআর দাপ্তরিক ভাষার অন্তগর্ঙত। দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট ১১টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে।
[সম্পাদনা করুন] ধর্ম
মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়েতে বসবাসকারী জুলুরা খৃস্টান (রোমান ক্যাথলিক অথবা প্রোটেস্ট্যান্ট)। তবে জিম্বাবুয়েতে অনেক জুলুই আধা খৃস্টান এবং আধা প্রকৃতি পূজারী। অন্যান্য সব জুলুই প্রকৃতি পূজারী।
[সম্পাদনা করুন] আরও দেখুন
- অ্যাংলো-জুলু যুদ্ধ
- ইনকাথা ফ্রিডম পার্টি
- উনগুনি
- শাকা জুলু
- জুলু গৃহযুদ্ধ
- জুলু রাজাদের তালিকা
- জুলু লাঠি যুদ্ধ
[সম্পাদনা করুন] বহিঃসংযোগ
- জুলু সঙ্গীত, বিবিসি semi-post-colonial style, রিয়েলপ্লেয়ার ফাইল.
- পিট রেটিফের উপর একটি নিবন্ধ
- জুলুল্যান্ডের দাপ্তরিক ওয়েবসাইটের ইতিহাস পাতা
- কোয়াজুলুর উপর মানবাধিকার প্রতিবেদন
[সম্পাদনা করুন] জুলুদের নিয়ে উপন্যাস
- চাইল্ড অফ স্টর্ম - হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড
- অ্যালান কোয়াটারমেইন - হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড
[সম্পাদনা করুন] তথ্যসূত্র
- ইংরেজি উইকিপিডিয়া
- 1 South Africa grows to 44.8 million, on the site southafrica.info published for the International Marketing Council of South Africa, dated 9 July 2003, retrieved 4 March 2005.
দক্ষিণ আফ্রিকার উপজাতি |
সম্পাদনা |
আফ্রিকানার | অ্যাংলো-আফ্রিকান | এশিয় | বুশম্যান | কেপ মালয় | কালার্ড | গ্রিকুয়া | ডেবেলে | সোথো | সোঙ্গা | সোয়াজি | সোয়ানা | ভেন্ডা | ঝোসা | জুলু |