মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (২২শে জুলাই, ১৯২৬ - ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১) মননশীল প্রবন্ধকার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] ব্যক্তিজীবন
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বজলুর রহমান চৌধুরী ও মা মাহফুজা খাতুন। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে পিতাকে হারান। তাঁর মা মামলায় জয়লাভ করে তাঁদের পরিবারের সম্পত্তি রক্ষা করেন। ফলে মোফাজ্জল, তাঁর দুই ছোট ভাই এহতেশাম হায়দার ও লুতফুল হায়দার এবং ছোট বোন রওশন আখতার রাজিয়ার পড়াশোনা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। তাঁর শৈশব ও কৈশর কাটে মামার আশ্রয়ে। ১৯৫৬ সালে সৈয়দা তাহমিনা মনোয়ারা নুরুন্নাহার-কে বিবাহ করেন। তাঁদের ঘরে ১৯৬৪ ও ১৯৬৭ সালে যথাক্রমে সুমন ও শোভন নামে দুই ছেলে হয়।
[সম্পাদনা করুন] শিক্ষা ও কর্মজীবন
মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী নোয়াখালীর সোনাপুরের আহমদিয়া হাই ইংলিশ স্কুল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন ও মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ঢাকা কলেজ (তৎকালীন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ) থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে কিছুদিন ইংরেজি অনার্স পড়েন, এবং পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনে চলে যান ও সেখানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসারে বাংলা (সম্মান) পড়তে থাকেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় অংশ নেন ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। এ সাফল্যের জন্য তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সুরেন্দ্র নলিনী গোল্ড মেডেল প্রদান করে। পরে ১৯৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁকে আবারও স্যার আশুতোষ গোল্ড মেডেল দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ১০০ বছরের ইতিহাসে তাঁর মত এত বেশি নম্বর পেয়ে কেউ বাংলা (সম্মান)-এ ডিগ্রী অর্জন করেনি। ১৯৪৭ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরে যান ও ১৯৪৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করে সাহিত্যভারতী উপাধি অর্জন করেন।
১৯৪৯ সালের নভেম্বরে তিনি শান্তিনিকেন্তন ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন ও রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে পাণ্ডূলিপি রচয়িতা হিসেবে যোগ দেন। ১৯৫১-তে জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেন। তিনি এসময় সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ (বর্তমান নটরডেম কলেজ)-এও খন্ডকালীন অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৫৭ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (School of Oriental and African Studies)-এ ভাষাবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য বৃত্তি লাভ করেন। সেখানে দুই বছর গবেষণা করার পর কথ্য বাংলার শব্দের ছন্দোবিজ্ঞানের ওপর একটি অভিসন্দর্ভ লেখেন, কিন্তু তাঁর গবেষণার ধরন তৎকালীন মার্কিন ধারার ভাষাবৈজ্ঞানিক গবেষণাপন্থার অতিমাত্রায় অনুসারী ছিল বলে এই অভিসন্দর্ভটি প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়নি। পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলা একাডেমী থেকে এটি প্রকাশ করা হয়।
১৯৬৪ সালে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভাষাবিজ্ঞান পড়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তাঁর এ চেষ্টা সফল হয়নি।
১৯৭০ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। একই বছরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা রীডার (পরবর্তীতে এ পদের নাম বদলে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়) পদে নিযুক্ত হন।
[সম্পাদনা করুন] মৃত্যু
১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর আল-বদর বাহিনী তাঁকে তাঁর কনিষ্ঠ ভাই লুতফুল হায়দার চৌধুরীর বাসা থেকে অপহরণ করে। এর পর তাঁর আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ঐ দিনই তাঁকে হত্যা করা হয়।
[সম্পাদনা করুন] গ্রন্থাবলি
- বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার (১৯৬২)। ঢাকা।
- রবি পরিক্রমা (১৯৬৩)। ঢাকা।
- সাহিত্যের নব রূপায়ণ (১৯৬৯)। ঢাকা।
- রঙীন আখর (১৯৬৩)। ঢাকা।
- Colloquial Bengali (1963 and 1966). Dhaka. Bangla Academy.
এছাড়াও জীবদ্দশায় তাঁর প্রচুর অপ্রকাশিত রচনা ছিল। এগুলো সাহিত্য-বিষয়ক গবেষণা, ব্যক্তিগত ও সৃষ্টিশীল রচনা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা, চিঠি ও ভাষাবিজ্ঞান - এ ছয়টি ভাগে ঢাকার বাংলা একাডেমী থেকে ভাষাবিজ্ঞানী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কর্তৃক সঙ্কলিত ও সম্পাদিত মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর রচনাবলী শিরোনামে তিন খন্ডের বই আকারে ১৯৭৮, ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়।
[সম্পাদনা করুন] পুরস্কার ও সম্মাননা
- গবেষণায় বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭১)