ক্যান্সার
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ক্যান্সার বা কর্কট রোগ এক প্রকারের ব্যাধি, যাতে কোন এক রকম দেহকোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পেয়ে আশেপাশের কলা ভেদ করে অনুপ্রবেশ করে। সব বয়সের মানুষেরই ক্যান্সার হতে পারে, তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। উন্নত বিশ্বে ক্যান্সার মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লাসিয়া (টিউমর) বলে, এবং সেরকম ক্রিয়া যুক্ত কোষকে নিয়োপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বেনাইন টিউমর। বেনাইন টিউমর ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমর বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাইযুক্ত কোষগুলিকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বেনাইন টিউমর হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বেনাইন টিউমর ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন স্থিরতা নেই। কিছু বেনাইন টিউমর সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবস্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বেনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বেনাইন টিউমরও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্টাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।
সূচিপত্র |
[সম্পাদনা করুন] পরিভাষা ও নামের উৎস
- হাইপারপ্লাসিয়া (hyperplasia) =কলায় কোষের সংখ্যাধিক্য (হাইপার= অধিক, ~প্লাসিয়া= মোটামুটিভাবে কলায় কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি বা কোষীয় বৈশিষ্ট্য)
- মেটাপ্লাসিয়া (metaplasia= একরকম কলার অন্যরকম কলায় পরিবর্তন
- টিউমর (Tumor, অর্বুদ)= স্ফীতি (গ্রীক ভাষায়)। পূর্বে প্রদাহ জনিত স্ফীতিকেও টিউমর বলা হত। তবে এখন টিউমর বলতে নিয়োপ্লাসিয়া বোঝায়।
(সাধারণতঃ সব টিউমরের নামের শেষে ~ওমা অনুসর্গ থাকে, যেমন (মেলানোমা, লাইপোমা), ও শুরুর অংশে কলার উৎস সম্বন্ধে নির্দেশ থাকে।)
- নিয়োপ্লাসিয়া (neoplasia)= অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্ধনশীল কলা (নিয়ো~ = নতুন)
- হ্যামারটোমা (Hamartoma = কলার কোষগুলি এককভাবে স্থানীয় বিশেষীভবন লাভ করলেও সমবদ্ধভাবে কলার ত্রিমাতৃক স্থাপত্য সঠিকভাবে দেওয়ার বদলে জট পাকিয়ে যায়। (অর্থাৎ কোষীয় সংখাবৃদ্ধি খুব একটা অনিয়ন্ত্রিত না হলেও কলাসংগঠন অনিয়ন্ত্রিত)
- ম্যালিগ্ন্যান্ট টিউমর (malignant) = অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম এবং ভেদন ক্ষমতাযুক্ত টিউমর = ক্যান্সার
ক্যান্সার মানে কাঁকড়া (সংস্কৃত কর্কট)। স্থানীয় কলা ভেদ করে ম্যালিগ্ন্যান্ট টিউমর যখন অনেক শুঁড়ের মত মাইক্রোমেটাস্টাসিস সম্প্রসারিত করে তখন তাকে দেখতে অনেকটা দাঁড়া-ওয়ালা কাঁকড়ার মত দেখায়।
- অ্যানাপ্লাসিয়া (anaplasia) = কলার অপ-বিশেষীভবন (ডি-ডিফারেন্সিয়েশন), অর্থাৎ কলা আগের বিশেষীভূত কলা-বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভ্রুণীয় বা প্রাক-কলার মত আচরণ করতে থাকে। অ্যানাপ্লাস্টিক অর্থাৎ অ্যানাপ্লাসিয়া-যুক্ত ক্যান্সার সাধারাণতঃ বেশী ক্ষতিকর।
- কার্সিনোমা = আবরণি কলা উৎসের ক্যান্সার
- সার্কোমা = সংযোগ কলা (মেসেনকাইম) উৎসের ক্যান্সার